
আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস, শিল্পে জ্বালানি সরবরাহের অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও নানাবিধ দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির গতি কমেছে। এডিপি বাস্তবায়ন প্রায় পুরোটাই ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। রাজস্ব আয় না বাড়ালে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা শীর্ষক সেমিনারে এ আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।
বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে ধস
ডিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০২৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২.৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রপ্তানি কমেছে ৩.০৯% আর আমদানি বেড়েছে ৪৬.৮%। সুদের হারও বেড়ে ২০২৪ সালের জুনের ১১.৫২% থেকে ২০২৫ সালের মে মাসে দাঁড়িয়েছে ১২.১১%।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক শান্তি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা জরুরি।
কর আহরণ ও এডিপি
সিপিডি ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এডিপি বাস্তবায়ন এখন পুরোপুরি ঋণের ওপর নির্ভর করছে, যা টেকসই নয়। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও কর আহরণ বাড়াতে হবে।
বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, দুর্নীতি দমন না করলে অর্থনীতি বাঁচানো যাবে না। মাত্র ২৩ লাখ করদাতার ওপর নির্ভর করে দেশ এগোনো সম্ভব নয়।
ঋণপ্রবাহ ও জ্বালানি সংকট
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতিতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কঠোর হলেও বিনিয়োগে প্রতিবন্ধক শুধু উচ্চ সুদহার নয়, জ্বালানি সংকট ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিও বড় কারণ।
দুর্নীতি প্রসঙ্গ
ড. এ কে এনামুল হক আরও বলেন, সিলেটের সাদাপাথর কাণ্ডে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। দুর্নীতি বন্ধ করতে কেবল বদলি নয়, মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।